আধুনিক বাংলা অভিধান অনুসারে গণ্ধাতুর সাথে ইত প্রত্যয় যুক্ত হয়ে গণিত শব্দটির উৎপত্তি
হয়েছে । ব্যুৎপত্তিগতভাবে গণিত শব্দের অর্থ গণনা করা বা হিসাব করা । এ ক্ষেত্রে এটি গণনাশাস্ত্র
। ইংরেজি Mathematics শব্দটির বাংলা সমার্থক শব্দ গণিত ।
Mathematics শব্দটি গ্রীক শব্দ Mathema থেকে এসেছে যার অর্থহিসাব করা বা গণনা করা । Oxford
Dictionary অনুসারে Mathematics শব্দটির অর্থ হলো – স্থান , সংখ্যা ও পরিমাণ সংক্রান্ত
বিজ্ঞান ( Mathematics is the science of space , numbers and quantity )। শুরুতে গণিত শব্দটি গণনা বা হিসাব করার সাথে সম্পর্কিত হলেও মানব সভ্যতার উন্নতির সাথে
সাথে এর অর্থের ব্যাপকতা অনেক গুণ বৃদ্ধি পেয়েছে ।
এখন বিষয় হিসাবে গণিতের অর্থব্যাপক । গণিতবিদদের কাজ হল মূর্ত বাস্তবতা থেকে গণিতের বিভিন্ন বিমূর্ত সূত্র উদঘাটন করা । বিজ্ঞানের সমস্ত শাখায় গণিতের ব্যাবহার রয়েছে । গণিতকে তাই বিজ্ঞানের ভাষা , সার্বজর্ব নীন ভাষা ও সমস্ত বিজ্ঞানের রাণী বলে ডাকা হয় ।
নিন্মে কয়েকজন বিখ্যাত গণিতবিদের সংজ্ঞা উল্লেখ করা হল :
অ্যারিস্টটল গণিতকে সংজ্ঞায়িত করেন – , ‘ পরিমাণ সংক্রান্ত বিজ্ঞান । ‘
বেঞ্জামিন পায়ার্স এর মর্সতে – , ‘ গণিত হচ্ছে এমন বিজ্ঞান যা প্রয়োজনীয় সিদ্ধান্তে উপনীত হতে সাহায্য করে । ‘
বি. রাসেল এর মতে , ‘ গণিত হচ্ছে প্রতীকীয় যুক্তিবিদ্যা ( Mathematics is Symbolic Logic ) । ‘
হেনরি যুঙ এর মতে , ‘ যাবতীয় বিমূর্ত গাণিতিক পদ্ধতি ও তাদের বাস্তব প্রয়োগকেই গণিত বলে । ‘
জন লক এর মতে , ‘ Mathematics is the way to settle in the mind and heart reasoning . ‘
⬜ উপরোক্ত সংজ্ঞা গুলো পর্যালোচনা করলে আমরা বলতে পা রি যে , গণিত হল –
সংখ্যাশাস্ত্রের বিজ্ঞান
প্রতীকমূলক বিজ্ঞান
যে বিজ্ঞান বিমূর্ত চিন্তনে সাহায্য করে
প্রয়োজনীয় ও নির্ভুল সিদ্ধান্তে উপনীত হতে সাহায্য করে
স্থান , সংখ্যা এবং পরিমাণ সম্পর্কিত বিজ্ঞান
যুক্তিগ্ৰাহ্য সিদ্ধান্তের বিজ্ঞান
বিমূর্ত ধারণার সৌধ নির্মা ণ এবং তাদের সম্পর্ক বিষয়ে পাঠ
গণিতের প্রকৃতি :
গণিত বিষয়ের কিছু নিজস্ব বৈশিষ্ট্য রয়েছে । গণিতের সংজ্ঞায় বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণবৈশিষ্ট্যের উল্লেখ আছে । এইবৈশিষ্ট্যগুলো বিশ্লেষণ করলে গণিতের প্রকৃতি সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যায় । গণিতের প্রকৃতি নিন্মরুপ :
- গণিত পরিমাণ ও পরিমাপের সুস্পষ্ট ধারণা দেয়
- ক্রমের নির্ভুল প্রকাশ করে
- গণিতের প্রতীক বিমূর্ত চিন্তার শক্তিশালী বাহক
- জ্যামিতির চিত্র আদর্শসৌন্দর্যবো র্য ধের ধারণা দেয়
- সমস্যা সমাধানের উপযোগী মননশীলতায় সহায়তা করে
- যথাযতভাবে যুক্তি প্রয়োগ করার কৌশল শেখায়
- আরোহী , অবরোহী , সংশ্লেষণ ও বিশ্লেষণ পদ্ধতির প্রয়োগ করতে শেখায়
- গাণিতিক সূত্র সর্বা য়ন করতে ও প্রয়োগ করতে শেখায়
- স্বতঃস্ফূর্ত জ্ঞান অর্জনে সহায়তা করে
- আত্মনির্ভরশীল ব্যক্তিক বিকাশ ঘটায়
- অংকনের মাধ্যমে বিমূর্ত ধারণা প্রকাশ করতে শেখায
বাংলা একাডেমি বাংলা অভিধান অনুসারে স্বতঃসিদ্ধ ( Axiom ) শব্দটির অর্থ হল ‘ প্রমাণের অপেক্ষা রাখে না এমন বাস্বাভাবসিদ্ধ । ‘ গণিতে স্বতঃসিদ্ধ ও স্বীকার্য এমন ধর র্য নের সত্য যা প্রমাণ করা যায় না কিন্তু সত্য বলে স্বীকার করে নিতে হয় ।
এগুলো স্ব – প্রমাণিত ও স্ব – প্রকাশিত সত্য ।
স্বতঃসিদ্ধকে দুই দু ভাগে ব্যাখ্যা দেয়া যায় ।
যেমন , লজিক্যাল স্বতঃসিদ্ধ ও নন – লজিক্যাল স্বতঃসিদ্ধ । লজিক্যাল স্বতঃসিদ্ধকে সার্বজর্বনীন সত্য বলে ধরে নেয়া হয় । আর নন – লজিক্যাল স্বতঃসিদ্ধকে অনেক সময় স্বীকার্য হিসাবে চিহ্নিত করা হয় ।
স্বীকার্যসর্যমূহ ( Postulates ) | স্বতঃসিদ্ধসমূহ ( Axioms ) |
১. একটি সরল রেখাংশ যে কোনো দুইদুটি বিন্দুর সংযোগে অঙ্কন করা যাবে । ২. একটি সরল রেখাংশ অসীমভাবে বর্ধিত করে সরলরেখায় পরিণত করা যাবে । ৩. একটি প্রদত্ত রেখাংশ থেকে একটি বৃত্ত অঙ্কন করা যাবে যার ব্যাসার্ধ হর্ধ বে উক্ত রেখাংশটি এবং এর একপ্রান্ত বৃত্তটির কেন্দ্র হবে । ৪. সকল সমকোণ সমপাতিত হয় । | ১. যদি কতিপয় বস্তু একই বস্তুর সমান হয় তারা পরস্পরের মধ্যেও সমান হবে । ২. যদি সমান সমান অংশের সাথে সমান অংশ যোগ করা হয় তবে যোগফল সমান হবে । ৩. যদি সমান সমান অংশ থেকে সমান অংশ বিয়োগ করা হয় তবে বিয়োগফল সমান থাকবে । ৪. যেসব বস্তু পরস্পরের উপর সমপাতিত হয় তারা পরস্পর সমান ৫. সম্পূর্ণ বস্তুটি এর অংশবিশেষ থেকে বৃহত্তর |